Friday, December 11, 2015

অষ্টাঙ্গ যোগ

পতঞ্জলি যোগের মূল ভিত্তি “অষ্টাঙ্গ যোগ” নামে প্রচলিত। অষ্টাঙ্গ যোগই বর্তমানে প্রচলিত রাজযোগের প্রতিটি প্রকারভেদের মৌলিক বৈশিষ্ট। এই আটটি অঙ্গ হল

১. যম (পাঁচটি “পরিহার”)
অহিংস, সত্য, অস্তেয়, ব্রহমচর্য ও অপরিগ্রহ।

২. নিয়ম (পাঁচটি “ধার্মিক ক্রিয়া”)
পবিত্রতা, সন্তুষ্টি, তপস্যা, সাধ্যায় ও ঈশ^রের নিকট আত্মসমপর্ণ।

‘যম’ ও ‘নিয়ম’ এ দুয়েরই উদ্দেশ্য হল ইন্দ্রিয় ও চিত্তবৃত্তিগুলোকে দমন করা এবং এগুলিকে অন্তর্মুখী করে ঈশ^রের সঙ্গে যুক্ত করা।

৩. আসন
যোগ অভ্যাস করার জন্য যে ভঙ্গিমায় শরীরকে রাখলে শরীর স্থির থাকে অথচ কোনরূপ কষ্টের কারণ ঘটেনা তাকে আসন বলে। সংক্ষেপে স্থির ও সুখজনকভাবে অবস্থান করার নামই আসন।

৪. প্রাণায়াম (“প্রাণরায়ু নিয়ন্ত্রণ”)
প্রাণস্বরূপ নিঃশ্বাস-প্রশ^াস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবনশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ।

৫. প্রত্যাহার
চক্ষু প্রভৃতি ইন্দ্রিয়কে জাগতিক সকল বস্তু থেকে মুক্ত করে কেবল পরমাত্মায় লীনপ্রাপ্ত চিত্তের অভিমুখী করে তোলাই হলো প্রত্যাহার। আসন ও প্রাণায়ামের সাহায্যে শরীরকে নিশ্চল করলেও ইন্দ্রিয় ও মনের চঞ্চলতা সম্পুর্ণ দুর নাও হতে পারে। এরূপ অবস্থায় ইন্দ্রিয়গুলোকে বাহ্যবিষয় থেকে প্রতিনিবৃত্ত করে চিত্তের অনুগত করাই হল প্রত্যাহার।

৬. ধারণা
কোনো একটি বিষয়ে মনকে স্থিত করা। কোনো বিশেষ কিছুর প্রতি বা আধারে (পরমাত্মায়) চিত্তকে নিবিষ্ট বা আবদ্ধ করে রাখাকে ধারণা বলে।

৭. ধ্যান
মনকে ধ্যেয় বিষয়ে বিলীন করা। যে বিষয়ে চিত্ত নিবিষ্ট হয়, সে বিষয়ে যদি চিত্তে একাত্মতা জন্মায় তাহলে তাকে ধ্যান বলে। এই একাত্মতার অর্থ অবিরত ভাবে চিন্তা করতে থাকা।

৮. সমাধি
ধ্যেয়ের সঙ্গে চৈতন্যের বিলোপসাধন। ধ্যান যখন গাঢ় হয় তখন ধ্যানের বিষয়ে চিত্ত এমনভাবে নিবিষ্ট হয়ে পড়ে যে, চিত্ত ধ্যানের বিষয়ে লীন হয়ে যায়। এ অবস্থায় ধ্যান রূপ প্রক্রিয়া ও ধ্যানের বিষয় উভয়ের প্রভেদ লুপ্ত হয়ে যায়। চিত্তের এই প্রকার অবস্থাকেই সমাধি বলে। এই সমাধির প্রকার- সবিকল্প এবং নির্বিকল্প। সাধকের ধ্যানের বস্তু ও নিজের মধ্যে পার্থক্যের অনুভুতি থাকলে, তাকে বলা হয় সবিকল্প সমাধি। আবার সাধক যখন ধ্যেয় বস্তুর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান সে অবস্থাকে বলা হয় নির্বিকল্প সমাধি। তখন তাঁর মনে চিন্তার কোনো লেশমাএ থাকে না। এই সমাধি লাভ যোগসাধনার সর্বোচ্চ স্তর, যোগীর পরম প্রাপ্তি।
এই শাখার মতে, চৈতন্যের সর্বোচ্চ অবস্থায় উঠতে পারলে বৈচিত্রময় জগতকে আর মায়া বলে মনে হয় না। প্রতিদিনের জগতকে সত্য মনে হয়। এই অবস্থায় ব্যক্তি আত্মজ্ঞান লাভ করে। তাঁর আমিত্ব রহিত হয়।


সাধনা বা কোন কাজ করার পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীরকে সুস্থ রাখা। “শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম”।
অর্থাৎ, ‘শরীর মন সুস্থ না থাকলে জাগতিক বা পারমার্থিক কোন কর্মই সুষ্ঠভাবে করা সম্ভব নয়।


No comments:

Post a Comment